শহিদুল ইসলাম: মেয়ের বয়স সেদিন ঠিক ঠিক আঠারো হবে,সেদিন লাল শাড়ী মুড়িয়ে,কানে স্বর্নের দুল পরিয়ে ,হাতে ও গলায় স্বর্নালংকার সাজিয়ে,পায়ে রুপার নূপুর দিয়ে, পাঠাবে শ্বশুর বাড়ী।
এই স্বপ্ন ছিলো কৃষক কুদ্দুস মোল্লার। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার শিবানন্দপুর গ্রামে তার বাড়ী। দারিদ্রতার কারনে পড়ালেখা করতে পারেনি। বাপদাদার আমল থেকে চলমান কৃষি কাজই তার পেশা। তার পরও আধুনিক কৃষি আর সমাজ ব্যবস্থার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এই নিরক্ষর কৃষক। এই জন্য সবজী চাষে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশ লাভবান সে।
দুই কন্যা সন্তানের জনক সে । এদের পড়ালেখার প্রতিও বেশ আন্তরিক কৃষক কুদ্দুস। নিজে লেখা পড়ার সুযোগ না পেলেও মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এই জ্ঞান রয়েছে কুদ্দুসের। পরশীরা বহুবার বলেছে,মেয়ে সেয়ানা হচ্ছে, বিয়ে দিয়ে দাও। ওসব পড়ালেখা করিয়ে লাভ কি ? এসব কোন কিছুরই কান দেয়নি কুদ্দুস। তার বিশ্বাস একটাই,তা হলো মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স ও শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এজন্যই কৃষক কুদ্দুসের মেয়ে এখন কলেজে পড়ে।
দিনভর কাজ শেষে সব কৃষক ঘুমোতে যায়,পৃথিবী নিরব নিথর হয় । জেগে ওঠে নিশাচর প্রাণী। এসময় তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন করে আবার কাজে যোগদেয় কৃষক কুদ্দুস। শিম গাছে আলোর ফাঁদ পেতে পোকা নিধন,মাথায় টর্চ লাইট বেধে বেগুন ক্ষেতের আগাছা পারিস্কার করা,মেয়ে ঠিকঠাক বই পরছে কিনা তা দেখা শুনা করা এসব কুদ্দুসের রাতের কাজ। এই উভচর কৃষক রাত দিন ৩ ঘন্টা ঘুমোয় কিনা কে জানে।
তার এসবের একটাই উদ্দেশ্য তাহলেও দুই মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করবো। লাল শাড়ী মুড়িয়ে,কানে স্বর্নের দুল পরিয়ে ,হাতে ও গলায় স্বর্নালংকার সাজিয়ে,পায়ে রুপার নূপুর জড়িয়ে , পাঠাবে শ্বশুর বাড়ী।
বড় মেয়ের বয়স এখন ১৭। হয়তো সামনের বছরেই পাত্রপক্ষ আসতে থাকবে। তাই তিলে তিলে গড়া পরিশ্রমে কিছু অলংকার তৈরির রেখেছে কুদ্দুস। জমিয়েছে ২.৫ ভরি স্বর্ন আর নগদ ৩৬ হাজার টাকা। ইচ্ছা ছিলো টাকা দিয়ে একটি গাভী কিনবে,যা আগামী বছরে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি করবে। কাজে লাগবে মেয়ের বিয়ের উৎসবে। কিন্তু সেই রঙিন স্বপ্ন এখন ধুসর।
চারিদিকে করোনার মতো মহামারির হানার মাঝেও গত ৬-৫-২০২০ইং দিবাগত রাতে সংঘবদ্ধ চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে কৃষকের সব সঞ্চিত ধন, ধুলিসাৎ করে গেছে সব স্বপ্ন। হতাশায় দিন গুনছে উভচর কৃষক কুদ্দুস। কেউ নেই তার একটু শান্তনা দেওয়ার .পাশে দাঁড়ানোর,সামনে দিন এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরনা দেওয়ার। কৃষক কুদ্দুসের রঙিন স্বপ্ন এখন ধুসর !
প্রকৌশল সহযোগিতায়: মোঃ বেলাল হোসেন
Leave a Reply