আমাদের ঢাকার বাসায় এক প্রতিবেশী ছিলেন- বৃদ্ধ মহিলা, যার গল্প আমি আপনাদের কাছে করেছি। ওই যে যিনি বারান্দাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। এক দৃষ্টিতে গলির রাস্তার দিকে চেয়ে থাকেন। যার কোনো অতিথি নেই, তিনিও কারো অতিথি নন। পৃথিবীর সাথে যার সম্পর্ক শুধু শ্বাসটুকু দিয়ে- তিনি যে কেমন আছেন, কিভাবে চলছেন- মাঝেমাঝে দুশ্চিন্তা হয়।
আমরা শত আলোচনায় এ গ্রুপটাকে মিস করে যাচ্ছি। যারা দেশে শুধু কেয়ারটেকার নিয়ে বাঁচছেন, ছেলেপেলে সব বিদেশে। সবার সে সামর্থ্যও নেই। অনেকে পাতানো ভাইপো বোনপো দিয়ে চলছিলেন। এ দুর্যোগের সময় কেয়ারটেকার গুলো যদি তাদের ছেড়ে চলে যায়, তাদের বাজার কে করে দিবে। ঔষধ কে কিনে দিবে। দুইটা ভাত ফোটানোর জন্য বুয়া আসবে কি করে। কাপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করবে- সব দোকান বন্ধ। একটু পরপর হাত ধোয়ার কথা কেউ বলে কিনা কে জানে! বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সব জামা কাপড় ছেড়ে ধুয়ে দিচ্ছেন কিনা কে জানে!
৮০ বছরের উপর মৃত্যুহার ১৪.৮%, ৭২-৭৯ বয়সে ৮%, ৬২ থেকে ৬৯ বয়সে ৩.৬%। সাথে কো-মরবিডিটি আছে, আছে নিঃসঙ্গতা, নতুন যোগ হয়েছে ‘মৃত্যু ভয়’। বাজারে যেতে পারেন না, লাইনে দাঁড়াতে পারেন না, ছেলেমেয়েরা দেখবে- উল্টো তাদের নিয়েই দুশ্চিন্তা করছেন। এক দুইজন ব্যায়ামের পার্টনার বা দাবা খেলার পার্টনার আসতো- সেও ভাটা পড়েছে। ফিজিওথেরাপিস্ট আসতো- সেও মনেহয় বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন করোনাভাইরাস সংক্রমণে চীন ও ইতালিকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র
আমাদের পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। অন্তত ঔষধ পৌছানো বা নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু বাজার- যদি কেউ পৌঁছে দিয়ে আসতেন। একটা হেল্প লাইন বা কিছু মোবাইল নাম্বার। অন্তত একটি সংগঠন যদি দাঁড়িয়ে যেত! কারো করুনা বা মুখাপেক্ষী হতে হতো না। একশো টাকার বাজারে তিনশো টাকার বিল সহ্য করতে হতো না।
লেখা: সানজিদা রিনি
গণমাধ্যম কর্মী
প্রকৌশল সহযোগিতায়: মোঃ বেলাল হোসেন
Leave a Reply