ভ্লাদিমির লেনিন বলেছিলেন- ‘কোনো কোনো দশক যায় কিছুই ঘটে না, আবার কোনো কোনো সপ্তাহেই এক দশকের ঘটনা ঘটে যায়’
কোভিড উনিশ।
দশকের পর দশক জমা ধুলোগুলো যেন একবারে সাফ করে দিলো। এতোদিন জানতাম আমরা সব জানি, এ এক সপ্তাহে জানলাম আমরা কিছুই জানি না। বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা– ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, ইউএসএ- এতো উন্নত এতো চাকচক্য; কিছুই না। এ সপ্তাহে এসে জানলাম ঘরবন্দী থাকা সুস্থ থাকার একটি উপায়। মানব জাতির স্বার্থেই মানুষের সাথে হাত মিলাতে হয় না। কোলাকুলি করতে হয় না। জানলাম আসল দক্ষতা ঘরে বসে কাজ করতে পারায়, ঘরের বাইরে কাজ সবাই পারে!
পৃথিবী ছোট; এয়ারলাইনস, রেলওয়ে, হাইওয়ে- কয়েকঘন্টা। এখন জানলাম পৃথিবী মানুষের জন্য ঠিক ততটুকু যতটা সে পায়ে হাঁটতে পারে। এখন জানলাম জ্ঞান বিজ্ঞানে কাজ করার জায়গা আরো অনেক আছে। গ্যালিলিও নিউটন আইনস্টাইন সব আবিষ্কার করে যান নি। এখন জানলাম সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ, ক্রিকেটার, ফুটবলার, মুভিস্টার, রকস্টার, ইউটিউবারের চেয়ে সমাজে অনেক বেশি প্রয়োজন ডাক্তার, সিস্টার, পুলিশ, মুদি দোকানদার, ফার্মেসিম্যান, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী কিংবা নিরাপত্তা রক্ষীদের।
এ সপ্তাহে এসে বুঝলাম সবসময় টাকা থাকলেই চিকিৎসা হয় না। রংপুরের এক কৃষকের স্বাস্থ্য কিংবা হুয়ান প্রদেশের এক মাংস বিক্রেতার সুস্থতা- আমার সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। কোনো রাজা বা পিএম-র সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন। বুঝলাম এ গ্রহটা শুধু আমাদের না, আমরা শেয়ার করছি আরো অনেকের সাথে। এমনকি অকোষীয় ভাইরাস- তারও এক হিস্যা আছে। জানলাম বেঁচে থাকার পরিকল্পনার চেয়ে আর কোনো পরিকল্পনাই গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তবে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে যেটি- ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীতে কখনো এমন সপ্তাহ আসতে পারে, যখন সব ‘মানুষ’ এক পক্ষে! টেবিলের এক পাশে সবাই!! জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-সীমানা কিছুই বাধা নয়।
সানজিদা রিনি
গণমাধ্যম কর্মী
প্রকৌশল সহযোগিতায়: মোঃ বেলাল হোসেন
Leave a Reply