যারা ভাবছেন পৃথিবীতে শুধু মহাত্মারাই ঘুরে বেড়ায় তাদের জন্য এ লেখা নয়!
করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীতে এমন এক সময় টেনে এনেছে যেখানে সবাইকে সন্দেহ করতে হবে। যেহেতু প্রাইমারি ডাক্তারদের প্রোটেকশন স্যুট দেয়া হচ্ছে না, মৃত ঘোষণা করতে হবে দূর থেকে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক, ওথ বিরোধী- কিন্তু উপায় নেই।
দেখুন ইতালি কেন আক্রান্ত? ইতালির মৃত্যু ধারাবাহিকতা একদম নামছে না। সবচেয়ে কমন যে উত্তরটি আপনি পাবেন- ইতালিয়ান দের দীর্ঘ জীবন। কোভিডে ইতালির মৃত লোকদের গড় বয়স ৭৮.৫ বছর। যারা প্রায় সবাই অন্তত একটি অসুখে ভুগছিলেন। গত বছরের তথ্যমতে পুরো দেশটিতে মানুষের গড় বয়স ৪৫.৪ বছর। কিন্তু এ উত্তরটি সম্পূর্ণ সন্তোষজনক নয়। কারন প্রথম আক্রান্ত একটি দেশ জাপান। যাদের মিডিয়ান এজ ৪৭.৩। ইতালির চেয়েও বুড়ো জাতি ওরা। তাদের মৃত্যু সংখ্যা মাত্র ৪৫।
ইউরোপ সহ সারা বিশ্বে রোগটি ছড়িয়েছেও ইতালি। কেন ইতালি? কারন ইতালির সাথে হুয়ান প্রদেশের এক বানিজ্যিক সম্পর্ক আছে।
প্রায় ১ লাখ চাইনিজ কর্মী ইতালির টেক্সটাইলে কাজ করেন। উত্তর ইতালির সাথে হুয়ানের সরাসরি ফ্লাইটও আছে। চীনের যখন দুরাবস্থা ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের স্বাস্থ্যসেবায় গর্বিত ইতালি চাইনিজদের রেস্ট্রিক্টেড ও স্ক্রিনিং করা বাদ রেখে প্রোগ্রাম থ্রু করে ‘Hug a Chinese’! চীনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে তারা যে ভিডিওটি ছাড়ে তার ক্যাপশনে ছিল- “I am not a VIRUS. I am HUMAN. Eradicate the prejudices…”! ইতিহাস রিপিটস ইটসেলফ। এবার মিত্রতার প্রতীক মনে করে চৈনিক ঘোড়া ঢুকে গেল আধুনিক রোমানদের নগরীতে। ট্রয়ের অভিশাপ সত্য হতে বসলো। কর্তৃপক্ষ তখনো ঘুমিয়ে। এর মাঝে চীনা নববর্ষ গেল জানুয়ারি ২৫ থেকে ফেব্রুয়ারী ৮। প্রচুর চাইনিজ নিজ দেশে গেছেন, সাথে রক্তে নিয়ে এসেছেন ভাইরাস। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মৃত্যু ৭৫০৪ জনের, আক্রান্ত ৭৪,৩৮৬ জন। মৃত্যু ঘোড়া শীঘ্রই থামার লক্ষন নেই। এ লেখা লিখতে লিখতে ভেনিস নগরীর ক্রন্দনরত সে বিমর্ষ নারী স্ট্যাচুটার কথা মনে পড়ছে। সত্যি সত্যি এঞ্জেল আজ কাঁদছে। চোখের সামনেই WHO ঘোষিত হেলথ কেয়ারে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশটির অহমিকা ট্রয়ের প্রাচীরের মতই ধ্বসে গেল!
কোথায় আজ স্বাধীনতা দিবসের সকালে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসার কথা লিখবো; লিখছি সন্দেহ, অবিশ্বাস, আর দূরে থাকার গল্প! তবে এটা সময় সবকিছু আবার নতুন করে চিন্তা করার। স্বাস্থ্যখাত ঢেলে না সাজিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ভাবা অর্থহীন। উন্নয়ন বা সামরিক শক্তি জীবনের একটি পর্যায়ের পর বিকল। বিশ্বব্যাংক এর তথ্যমতে বাংলাদেশ তার জিডিপির ২.৩৪% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করে। অন্তত ১০% এর যে প্রেসক্রিপশন, তার তুলনায় অনেক কম। যেখানে আমেরিকা ১৭%, ব্রিটিশরা ৯.৮%। ভারত ৩.৬৬%।
“উই আর কলাপসিং, উই নিড মোর ওয়ার্কার্স…”
স্পেনে সংখ্যাটি সরকারি হিসাব মতে ৬,৫০০ এর মতো। (মেডিকেল পার্সোন আক্রান্তের সংখ্যা)। মোট ৪৭,৬০০ কেসের ১৩.৬%। মোট স্বাস্থ্যসেবা কর্মশক্তির ১ শতাংশ। অন্তত মারা গেছেন তিনজন।
ইতালিতে আক্রান্তের এক দশমাংশ মেডিকেল স্টাফ। মিডিয়া মতে অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন। ইউএসএ-তে আপাত কোনো ডাটা নেই। ইরান এবং ফ্রান্স তাদের ডাটা ডিজক্লোজ করছে না। ভয় পাচ্ছে মেডিকেল স্টাফ ও রোগীদের মানসিক জোর কমে যাবে।
চীন WHO এর সাথে যৌথভাবে যে স্টাডিটি করেছিল সেখানে আশি হাজার আক্রান্তের অন্তত ৩,০০০ মেডিকেল ওয়ার্কার। WHO এর ডিজি এ সপ্তাহের রিপোর্টে মেডিকেল স্টাফদের অসুস্থ হয়ে পড়াকে ‘এলার্মিং’ বলছেন। কারন আপনি একজন ফাইটার হারাচ্ছেন, আরেকজন অসুস্থ বৃদ্ধি করছেন। যিনি আরো কয়েকজনকে নিয়ে অসুস্থ হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ৬৫,০০০ অবসরে যাওয়া ডাক্তার নার্সদের ফরমাল চিঠি পাঠিয়েছে চাকরিতে নতুন করে যোগদান করার জন্য। খবরটি পাঁচদিন আগের। ইতালিও এ মাসের শুরুর দিকে এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল।
ভারতে তারকা সংগীত শিল্পী কনিকা কাপুর হাসপাতালে দুরাবস্থা, মশা, খাবারের মান নিয়ে মিডিয়ায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। হাসপাতালের ডিরেক্টর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ‘এখানে থাকলে রোগীর মতো থাকতে হবে, কোন সেলিব্রিটির মতো নয়।’ পাবলিক কনিকাকে ধুয়ে দিচ্ছে।
আর আমাদের দেশে এক ওসি নাকি এক সরকারি ডাক্তারকে পিটিয়ে দিয়েছেন। সব হাসপাতালে সব রোগীর চিকিৎসা করা হবে স্যুইসাইডাল। কারন এটি মারাত্মক ছোঁয়াছে। তিন মাসে সারা পৃথিবীতে ৪,৫৫,০০০ কেস ২০,৫৪৭ মৃত্যু এমনি এমনিই না। ভেবে দেখুন এক রোগী এ লাইন থেকে সে লাইন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কতজনকে অসুস্থ করে ফেলবে! প্রায় সব দেশ বলছে রুটিন ওটি না করার জন্য। তার উপর নতুন নির্দেশ পিপিই ছাড়াই রোগী দেখতে হবে। একজন ডাক্তার কিভাবে বুঝবেন- রোগী করোনা পজিটিভ নন! মেডিকেল স্টাফ আক্রান্ত হয়ে গেলে লাভ কারোই হবে না। সে আরো দশজনকে অসুস্থ করে আইসোলেটেড হবে।
এমনিই সবখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দুইবার, তিনবার, চারবার ভাবা উচিত। চাকরি ছাড়ার সময় লোকজন ভাববে না কিন্তু!!!
এ স্বাধীনতা দিবসে এটিই প্রার্থনা- বরাদ্দ বাড়ুক।
এটা সময় সবকিছু নতুন করে ভাবার। এটা সময় সবকিছুকে সন্দেহ করার! ভগবান বুদ্ধের মুখও আজ মুখোশে ঢাকা…!
সানজিদা রিনি
গণমাধ্যম কর্মী, প্র. আলো।
Leave a Reply